সারওয়ার জাহান সুমন, গোমস্তাপুরঃ
বাঙালি জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যিনি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে লক্ষ শহিদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের পথ পরিক্রমায় অর্জিত অভিজ্ঞতা দিয়ে পরিকল্পিতভাবে বুঝিয়েছিলেন যে, কেবল কৃষিই হবে বাংলাদেশের প্রধান নিয়ামক। তারই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু কন্যা কৃষিবান্ধব সরকারের প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় কৃষির অগ্রগতি আজ দৃশ্যমান।
কৃষিতে ইতিমধ্যে সরকারের বিশেষ প্রণোদনায় যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প শুরু হয়েছে এবং এতে কৃষি আরও বেগবান হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে কৃষিতে এক নিরব বিপ্লব ঘটে চলেছে। দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে গোমস্তাপুরের কৃষি। কৃষি বান্ধব সরকারের নানা উদ্যোগে পূর্ণ্যেদ্যমে এগিয়ে চলেছে এ খাত। আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় দেশের পাশাপাশি গোমস্তাপুর উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নে কৃষির রূপান্তর ঘটেছে বাণিজ্যিক কৃষিতে। কৃষি শুধুই গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করছে না, যেকোনো সংকটে হাল ধরছে দেশের অর্থনীতিরও। উপজেলার কৃষির এগিয়ে চলার এই অগ্রগতির পেছনের কৃষিবান্ধব সরকারের আন্তরিকতা, উপজেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীলতা, স্থানীয় কৃষি দপ্তরের সহ প্রান্তিক কৃষক-কৃষাণীদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় আজকের এই অবস্থান।
সরকারের প্রণোদনা প্রাপ্যতা কৃষকের হাতে পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় কৃষি বিভাগের নৈতিক দায়িত্বশীলতা সর্বমহলে বেশ প্রশংসনীয়। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩১ হাজার ৮৬০ জন কৃষক পেয়েছেন কৃষি প্রণোদনা। যার কারণে কৃষিতে ঘটেছে এক অনন্য বিপ্লব। সরকারের বিনামূল্যে বিভিন্ন ধরণের বীজ ও সার পেয়ে বেজায় খুশি কৃষকরা। গ্রাম,পাড়া-মহল্লা থেকে এসে নিজ দায়িত্বে এই প্রণোদনা নিয়ে গেছেন।তালিকাভুক্ত কৃষক ছাড়া অন্য কেউ এসে এই প্রণোদনা নিতে পারেন নি। নারী কৃষকদের তালিকা অনুযায়ী দেওয়া হয়েছে । উপজেলা কৃষি বিভাগের তত্বাবধানে সুষ্ঠুভাবে বিতরণ করা হয়। এদিকে প্রণোদনা ফসল করে অনেক কৃষক লাভবান হয়েছেন। সরকারি এই প্রণোদনা পেয়ে তারা উচ্ছ্বসিত হয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার, নিশাত আনজুম অনন্যা প্রতিবেদক কে জানান, দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ রূপ দানের লক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেখানো পথ অনুসরণ করে আজ আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এ অঞ্চলের কৃষি খাতের উন্নয়নে সরকারি প্রণোদনা, কৃষি বিষয়ে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, আধুনিক যন্ত্রপাতি প্রদান, স্থানীয় কৃষি বিভাগের কঠোর পরিশ্রম ও প্রান্তিক কৃষক-কৃষাণীদের সমন্বিত উদ্যোগ এই উপজেলার সাফল্য।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায় , চলতি অর্থবছরে তালিকাভূক্ত কৃষকদের মধ্যে আউস ধানের প্রণোদনা পেয়েছেন ৬ হাজার ৫০০ জন, আমন ধানের ১৬০০ জন। প্রণোদনা হিসেবে তাদেরকে জনপ্রতি ৫ কেজি বীজ, ১০ কেজি করে ডিএপি ও এমওপি সার বিতরণ করা হয়। বোরো মৌসুমে ৫ হাজার জনকে হাইব্রিড ধানের বীজ ২ কেজি করে ও উফসী জাতের ৬ হাজার ১০০ জনকে ৫ কেজি বীজ, ১০ কেজি করে ডিএপি ও এমওপি সার পেয়েছেন। সরিষা প্রণোদনা পেয়েছেন ৬ হাজার ৯৫০ জন, গম ৩ হাজার জন, ভুট্টা ৯০০ জন, মাসকালাই ১ হাজার ২০০ জন, খেসারী ২০০ জন, মসুর ১৫০ জন, মুগ ১১০ জন ও শীতকালীন পেঁয়াজ ১৫০ জনকে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে ।
দোষীমনি কাঁঠাল গ্রামের কৃষক আবুল কালাম বলেন, লিজসহ ৪ বিঘা জমিতে আউস ধান চাষাবাদ করেছেন। এর মধ্যে তিনি ১ বিঘার জন্য প্রনোদনা হিসেবে ৫ কেজি ধানের বীজ, ১০ কেজি করে ডিএপি ও এমওপি সার পেয়েছেন।
এছাড়াও বাইরুল,সালাম,এমদাদুল, রবিউল ইসলামসহ কৃষকরা জানান তারাও বিনামূল্যে বীজ ও রাসায়নিক সার পেয়েছেন। তারা বলছেন বীজগুলো মান ভাল। বাইরের বীজ কিনলে অনেকসময় ভাল হয়না। আমরা নিজ খরচে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে এই প্রণোদনা নিয়ে এসেছি। যেহেতু সরকারের প্রণোদনা তাই বিনামূল্যে এগুলো পেয়ে আমরা বেশ উপকৃত। এজন্য কাউকে কোন তদবির করতে হয় না। তাই আমরা যারা সাধারণ কৃষক তারা বেশ উপকৃত হচ্ছি। এজন্য সরকারের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।ফখরুদ্দিন নামে এক কৃষক বলেন, কৃষি অফিস থেকে এক বিঘা জমির জন্য সরিষার বীজ ও সার পেয়েছেন। সার কিনতে হয়নি। ভাল উৎপাদন হয়েছে। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা তাকে কখন কি করতে হবে জমিতে এসে পরামর্শ দিয়ে আমাকে উৎপাদনে সহযোগিতা করেছেন ।
আমন প্রণোদনা নিতে আসা বৃদ্ধ নুরুল ইসলাম বলেন, বিনামূল্যে বীজ ও সার পেয়ে আনন্দ মনে হয়েছে। কিন্তু এই বয়সে কৃষি অফিসে এসে নিতে কষ্ট হচ্ছে। তবে কষ্ট হলেও প্রকৃত কৃষকরাই পাচ্ছেন। যেকেউ নিতে পারছেন না। সরকার আমাদের মত কৃষকদের প্রণোদনার মাধ্যমে সহযোগিতা করছেন।
গোমস্তাপুর ইউনিয়নের ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শেখ আল ফুয়াদ জানান, কৃষি প্রণোদনা পেয়ে কৃষকরা উপকৃত হচ্ছেন। এসব বীজ পেয়ে কৃষকরা মাঠে চাষাবাদ করছেন। ভাল ফলনে তাদেরকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
গোমস্তাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ তানভীর আহমেদ সরকার বলেন, উপজেলার ৩১ হাজার ৮৬০জন কে চলতি অর্থবছরে বিভিন্ন ধরণের বীজ ও সার পেয়েছেন। বিনামূল্যে এসব পাওয়ার কৃষকরা উপকৃত হয়েছেন। উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদন হচ্ছে ধান,গম,সরিষাসহ বিভিন্ন ধরণের ফসল। এতে করে বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধান, গম, বিভিন্ন সবজি সহ অন্যান্য খাদ্যশস্যের পাশাপাশি আম চাষের জন্য এই অঞ্চলে সুখ্যাতি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বপরিমাণ্ডলে। এই অঞ্চলের আম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। তিনি আর ও জানান সঠিক সময়ে সঠিক কৃষককে কৃষি বান্ধব সরকারের প্রণোদনা তুলে দিতে বদ্ধপরিকর উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ।
এ বিষয়ে প্রণোদনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিশাত আনজুম অনন্যা আরও বলেন, মাঠ পর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ যাচাই বাছাইপূর্বক প্রকৃত কৃষকদের তালিকা প্রণয়ন করে এবং কমিটির সর্বসম্মতিতে অনুমোদনপূর্বক প্রকৃত কৃষকদের মাঝে কৃষি প্রণোদনা বিতরণ করা হয় । এক্ষেত্রে, সরকারের কৃষি বিভাগের বরাদ্দসমূহ নীতিমালার আলোকে সুষ্ঠুভাবে কৃষকদের মাঝে বন্টন করা হয় ।